রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
এইচএম হুমায়ুন কবির, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)।।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র তীরবর্তী উপকুলীয় জনপথ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে কুমিমারা গ্রামে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও প্রথমবার অসময়ে তরমুজ চাষ করে তরমুজ চাষীরা এবার তরমুজ চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
সুত্রে জানা যায়, কুমিরমারা গ্রামের জাকির হোসেন গাজীর সবজি চাষাবাদ আবাদ সর্ম্পকে পুর্বে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ছাপা হলে পটুয়াখালীর লেবুখালী আঞ্চলিক কৃষি উদ্যান তথ্যকেন্দ্র গবেষনা ইনষ্টিটিউট কর্মকর্তাদের নজরে পরে নিউজটি এর পর তারা জাকির হোসেনকে অসময়ে তরমুজ চাষে পরামর্শ দিয়ে আগ্রহ করে তুলেন। তারা চারা ও মালচিং পলি(অ্যালমুনিয়াম জাতিয় যাহা বৃষ্টিতে নষ্ট হয় না) দিয়ে সহযোগিতা করে। চারাগুলো সংগ্রহ করে কৃষকদের বিনামূল্যে দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদানসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করে যাচ্ছেন চাষিদের। এর পর জাকির হোসেন গাজী ৩৩ শতাংশ, ওমর ফারুক ৬৬ শতাংশ, আ. হান্নান ১০ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষাবাদ শুরু করেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে কুমিরমারা গ্রামের কৃষকরা বিভিন্ন সবজি চাষ করে সেই সবজির পাশাপাশি চাষের জমির চার দিকে কান্দি তুলে ভিতরে লেক এবং মাঝখানে ধানের আবাদ করছে এসব কৃষকরা। জাকির হোসেন গাজীকে নিজ ক্ষেতে তরমুজ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত কাটাতে দেখা গেছে। তরমুজের মাচার নিচে সারি সারি তরমুজ শোভা পাচ্ছে। রোগ-বালাই মুক্ত রাখতে তরমুজ মাচায় বসানো হয়েছে ফাঁদ। এতে পোঁকা মাকরের হাত থেকে তরমুজ রক্ষা পাবে। চাষের জমিতে খুঁটি পুঁতে জাল দিয়ে লতাগুলো জালের ওপর তুলে দিলে সেগুলো তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। এরপর আসে ফুল। ফুল থেকে আসে ফল। কচি সবুজ–কালো ফলগুলো যখন আসে, তখন তাঁরাও প্রতিদিন অসময়ে তরমুজ ফলার বিস্ময়ের ঘোরে ছিলেন। এবার জাকির হোসেন গাজী ৪৫০ গাছে আট শত তরমুজ পাবেন। একেকটির ওজন ছয় থেকে সাত কেজি হবে।
এই প্রথম ৩ জন দক্ষ কৃষকের মাধ্যমে সুস্বাদু উচ্চমূল্যের অসময়ে এ তরমুজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। চলতি ভরা বর্ষা মৌসুমেও তার মাচায় ঝুলছে ছোট-বড় অনেক তরমুজ। এই তরমুজের স্বাদও বেশ ভালো। এখন সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে তরমুজ। স্বপ্ন দেখাচ্ছে চাষিদের। গাছের যেখানে চোখ যাবে, সেখানেই তরমুজ। এখন তরমুজ আধাপাকা অবস্থা হয়েছে। বিস্তীর্ণ মাচায় জুড়ে শুধুই তরমুজ। এখন এ তরমুজ নিয়েই চাষিরা স্বপ্ন পুরনের আশা বুকে বাধে। অসময়ে তরমুজের বাম্পার ফলনসহ লাভজনক হওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক এ তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। জালের ফাঁক গলিয়ে ঝুলছে তরমুজ। তা–ও আবার অসময়ে। স্বাভাবিক ভাবে মৌসুমে দেশে যে তরমুজ উৎপাদিত হয়, তার ভেতরে লাল, কিন্তু এই তরমুজের ভেতরটা হলুদ। মিষ্টতায় মৌসুমি তরমুজের চেয়ে বেশি। নিচু, পতিত জমিকে বহুমুখী ব্যবহারের জন্য এই প্রযুক্তি দক্ষিণাঞ্চলে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রথমবার এই তিন কৃষক উচ্চমূল্যে তরমুজ চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। ফলে অসময়ে তরমুজ চাষের জনপ্রিয়তা বাড়বে এমনটাই আশা কৃষি বিভাগের। সারা বছরই এখন চাষ হবে তরমুজ। এসব তরমুজ দেখতে গাঢ় সবুজ এবং ভেতরে লাল আবার হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। খেতেও বেশ সুস্বাদু। বর্ষাকালেও তরমুজের ভালো দাম পাওয়ার আশা কৃষকদের। এক সময় বছরে তিন মাস বাজারে তরমুজ পাওয়া গেলেও এখন মিলবে সারা বছরই। মাত্র ১০৯ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন তারা। চাষীরা অপেক্ষাকৃত কম জমিতে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পায়। আর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রথম পর্যায়ে জমির চার দিকে লেক খনন করতে একটু বেশি খরচ হয়। পরবর্তীতে কয়েক বছর আর বাড়তি খরচের দরকার হয় না। এ বছর নতুন ভাবে মিনি গ্রীন হাউস ও মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে কৃষকরা। এখানকার স্থানীয় বিভিন্ন কৃষকরা বর্ষা মৌসুমে বাহারি রঙের তরমুজ মিনি গ্রীন হাঊস ও মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ অঞ্চলের মাটির গুনাগন, আবহাওয়া ও জলবায়ু সবজি চাষেবাদের জন্য উপযোগী হওয়ায় এটি চাষাবাদ কৃষকের কাছে লাভবান হয়ে উঠেছে। তরমুজ চাষাবাদে রাসায়নিক সার অথবা কীটনাশকের পরিবর্তে ব্যবহার করছে জৈবসার। তরমুজ দেখতে প্রতিদিনই তার জমিতে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া তরমুজের পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে লাউ, শসা, করলা, বোম্বে মরিচ, পেপে, কাঁচা মরিচ,লাফা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, টরমুজ, টমেটো সহ নানা প্রজাতীর সবজি চাষ করেছেন। তার সাফল্যেও সংবাদ এলাকার মৌসুমি ফসল চাষীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার ক্ষেতের তরমুজ ফল দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন ও কৃষকরা আসেন। আগামীতে তিনি ব্যাপক হারে এ তরমুজ চাষ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২০১৭ সালে প্রথম ভাসমান সবজি ও ফল আবাদ প্রকল্পের অধীনে প্রথম পরীক্ষামূলক ‘বেবি ওয়াটার মেলন’ বা ছোট তরমুজের আবাদ শুরু হয়। সেটা ছিল আকারে ছোট, দুএক কেজি ওজনের এবং হাইব্রিড প্রজাতির। এরপর এই ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে গত বছর দুটি দেশী জাত— বারি তরমুজ-১ ও ২ উদ্ভাবন করেন। সেটি লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্বকেন্দ্রে আবাদ করে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
নীলগ্ঞ্জ ইউনিয়নে কুমিরমারা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন গাজী জানান, আমি এক সময় রাজমিস্ত্রী কাজ করতাম। তা বাদ দিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কৃষি কাজ করে আসছি। এ বছর আমি ৩৩ শতাংশ জমিতে তরমুজ সবজি চাষ করি।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নে কুমিরমারা গ্রামের কৃষক ওমর ফারুক বলেন, আমি ৬৬ শতাংশ জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। আশা করি ১০-১৫ দিনের মাথায় বাজারজাত করতে পারবো। তরমুজ চাষে যে টাকা ব্যয় হয়েছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা লাভ হবে। অল্প সময়ে ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে তরমুজের দামও বেশ ভালো পাওয়া যাবে। অসময়ে বাজারে তরমুজের চাহিদাও রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ্ জানান, আমরা তাদের প্রশিক্ষন দিচ্ছে। সামনে দিকে তরমুজ চাষ আরো বেশি করা যায় সে ব্যবস্থা করতেছি। কুষকদের সার ও ঔষধের আমরা অফিস থেকে সহতায় করছি।